সুইডেনে প্যানেল আলোচনা: বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বসম্প্রদায়ের করণীয়।



স্টকহোম, ২১ জানুয়ারি – সুইডিশ গণমাধ্যম ও সাহিত্য সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা জোর দিয়ে বলেন, একটি স্বাধীন গণমাধ্যম, জননিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।
স্টকহোমে সুইডিশ রাইটার্স ইউনিয়নের আয়োজনে ‘বাংলাদেশ, এখনো স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ‘Ny Tid’ পত্রিকার সম্পাদক জন ওয়াই. জোনস, সুইডিশ দৈনিক ‘Dagens Nyheter’-এর সাবেক প্রধান সম্পাদক আর্নে রুথ, কবি ও নাট্যকার আনিসুর রহমানসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আলোচনা সঞ্চালনা করেন সুইডিশ কবি ও সম্পাদক লার্স হ্যাগার।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নৈরাজ্যের অভিযোগ

আলোচকরা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের মতে, সন্ত্রাসীরা ভাস্কর্য, একাডেমি, জাদুঘর, গ্রন্থাগার ধ্বংস করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, বেগম রোকেয়া ও মুক্তিযুদ্ধের বীরদের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে।

তারা আরও অভিযোগ করেন, ব্যাংক, দোকানপাট, চিড়িয়াখানা, বাসাবাড়িতে লুটপাট চালানো হয়েছে। কারাগারে হামলা চালিয়ে বন্দিদের মুক্ত করা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, এমনকি মন্দির ও ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম পরিবারগুলোর ওপর হামলা হয়েছে।

সন্ত্রাসী হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন

আলোচনায় উঠে আসে, শত শত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। দেশি-বিদেশি নাগরিকসহ বহু মানুষ হোটেল অগ্নিসংযোগে নিহত হয়েছেন। শিল্প-সংস্কৃতির ওপর হামলা চালিয়ে সংগীত স্টুডিও, নাট্যশালা, মাজার ও বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে, যা আইএসের নৃশংসতার সঙ্গে তুলনীয়।

এছাড়া, পরিবহন ব্যবস্থা, স্কুল ও হাসপাতালের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি কেন্দ্র ও জাতীয় শিশু একাডেমি ধ্বংস করা হয়েছে। শত শত পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে এবং লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী ও রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের আহ্বান

আলোচকরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। তারা প্রশ্ন তোলেন, "বাংলাদেশে যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে, তা কি তালেবান, আইএস বা আল-কায়েদার মতো উগ্রপন্থীদের উত্তরসূরি?"

প্যানেল আলোচনার পর মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা কাজী কুদ্দুস, আকতার এম. জামান, সৈয়দ বজলুল বারী মাসুম, সেরাজুল খান, ইফতেখার জুয়েল, মিজানুর রহমান মিজান, হুমায়ুন কবির, হাসান মিয়া এবং সুইডেনের হিন্দু ফোরামের প্রতিনিধি পিয়া ইসাকসন।

সভায় উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচারণা চালানোর অঙ্গীকার করেন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url