রেহাই পাচ্ছেন না অসহায় পিতা মাতাও‘ডেভিল হান্ট’: গণগ্রেফতার, লুটপাট ও আতঙ্কে দেশ।


নিজস্ব প্রতিবেদক | ইউরো বাংলা খবর

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচালিত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নিয়ে দেশজুড়ে আতঙ্ক ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই অভিযানের মাধ্যমে ব্যাপক গণগ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের বৃদ্ধ পিতা-মাতারাও এর শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামাত ও সমন্বয়কারী নেতারা অংশগ্রহণ করায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর এ অভিযানে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই নয়, বরং বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমন্বয়কারী নেতারাও অংশ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। বিভিন্ন এলাকায় বিরোধী মতাদর্শের লোকজনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

জনমনে আতঙ্ক: "আগেই ভালো ছিলাম?"

সাধারণ জনগণের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে দরিদ্র, দিনমজুর ও সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। তারা বলছেন, এই পরিস্থিতির চেয়ে আগের সরকারই ভালো ছিল।

মাঠপর্যায়ের অসহায় মানুষের বক্তব্য:

✅ আব্দুল হক (রিকশাচালক, নারায়ণগঞ্জ):
"আগে খেয়ে-পরে দিন কাটাইতাম। এখন আতঙ্কে আছি, রাস্তায় বের হলেই পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আমি তো রাজনীতি করিনা, কিন্তু তারপরও ভয় লাগছে। আগে ভালোই ছিলাম!"

✅ রাশিদা বেগম (গার্মেন্টস কর্মী, গাজীপুর):
"আমরা তো ভোটও দেই না, শুধু কাজ করি। কিন্তু এখন মনে হয়, আমরা কেউই নিরাপদ না। পাড়া-মহল্লায় পুলিশ, মাঝে মাঝে কে কোন দলের বুঝাই মুশকিল। আগে এসব ছিল না, তখন ভালোই ছিলাম।"

✅ মোস্তাক আহমেদ (মুদির দোকানি, কুমিল্লা):
"পুলিশ এসে বলে, দোকান বন্ধ কর, রাতে কোনো লোক যেন বাইরে না থাকে। আমরা ব্যবসা করবো কিভাবে? কী খেয়ে বাঁচবো? আগে এসব ছিল না, জীবন স্বাভাবিক ছিল।"

✅ সাইফুল ইসলাম (চাষি, বগুড়া):
"আগে খেতে কাজ করতাম, এখন তো মাঠেও যেতে ভয় লাগে। গ্রামে ঢুকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, লুটপাট করে। এই কি স্বাধীনতা? আগে শেখ হাসিনার আমলেই ভালো ছিলাম!"

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ

নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে, এই সরকার নিরপেক্ষভাবে প্রশাসন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গণগ্রেফতার, হয়রানি ও দমননীতি সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করে তুলছে, যা তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে তলানিতে নিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বাড়ছে

এদিকে, বিএনপির ভেতরেও অস্থিরতা বাড়ছে। জানা গেছে, দলের অনেক নেতা তারেক রহমানের নির্দেশ মানছেন না। ফলে দলের প্রতি জনগণের আস্থাও কমছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ এ টানাপোড়েন দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতাকে আরও প্রকট করে তুলছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। মানুষ বিএনপির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে?

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্যাতন, লুটপাট ও দমননীতি দীর্ঘস্থায়ী হলে গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার জনগণের দাবি মেনে নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপ নেয় নাকি দমন-পীড়ন চালিয়ে রাজনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করে তোলে।

— ইউরো বাংলা খবর


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url