পিনাকী ভট্টাচার্য: ভারতীয় স্বার্থরক্ষায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের এক নতুন কৌশল?

ইউরোপ নিউজ ডেস্ক -
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে, যারা নেপথ্যে থেকে নানা ধরনের রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগের মুখে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম পিনাকী ভট্টাচার্য। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, তিনি এবং তার মতো আরও কিছু ব্যক্তি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তাদের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা এবং ভারতের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করা।
পিনাকী ভট্টাচার্যের পরিকল্পনা: বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

বিভিন্ন বিশ্লেষক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, পিনাকী ভট্টাচার্য বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রতা ছড়িয়ে দিয়ে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান। এর মাধ্যমে তিনি কয়েকটি কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ করতে চান, যা ভারতের দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করবে।

পিনাকীর সম্ভাব্য লক্ষ্যসমূহ:

1. বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়া:

ধর্মীয় বিভক্তি বাড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা।মুসলিম ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত তৈরি করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করা।

2. দেশের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতা দুর্বল করা:

বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা দুর্বল করা।বিদেশি সাহায্য এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলা।

3. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর আকর্ষণ করা:
বাংলাদেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা।পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের সুযোগ তৈরি করা।

4. ভারতীয় সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি করা:
সাম্প্রদায়িক সংঘাতের অজুহাতে ভারতকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের সুযোগ দেওয়া।
বাংলাদেশকে ভারতের নীতির প্রতি নির্ভরশীল করে তোলা।

ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে তা ভারতের বর্তমান শাসক দল বিজেপির জন্যও লাভজনক হতে পারে। বিশেষ করে, হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলোর শক্তিশালী অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ভারতের পক্ষে কাজ করতে পারে।

এছাড়া, নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কেননা, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতীয় কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলগুলো রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পারে।

পিনাকী ভট্টাচার্যের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

পিনাকী ভট্টাচার্য নিজে উচ্চবংশীয় হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে চান, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিদেশি হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যা বাংলাদেশকে একটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সংকটের মধ্যে ফেলতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে বিশ্ব পরিমণ্ডলে একজন নোবেল জয়ী হিসেবেও তার সুনাম নষ্ট হবে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং পিনাকী ভট্টাচার্যের মতো ব্যক্তিরা এই ষড়যন্ত্রের অন্যতম মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে এ ধরনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে দেশকে কোনো বহিরাগত শক্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না যায়।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url