বাংলাদেশে হামলা-ভাঙচুর: পরিকল্পিত না স্বতঃস্ফূর্ত?


ঢাকা, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ – ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে শুরু হওয়া ভাঙচুর ও সহিংসতা শুধুমাত্র সেখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর, দলীয় কার্যালয় ও শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে হামলা চালানো হয়। এই ভাঙচুরের ঘটনায় বুলডোজার ও এক্সকাভেটরের মতো ভারী যান ব্যবহার করা হয়, যা ঘটনাগুলোর পূর্বপরিকল্পিত চরিত্রের ইঙ্গিত দেয়।
অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, হামলার ধরণ দেখে এটি পূর্বপরিকল্পিত বলেই মনে হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার যে তেমন কঠোর ভূমিকা নেয়নি, সেটিও স্পষ্ট। ফলে সরকারের নিরপেক্ষতা ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রতিক্রিয়া ও সরকারের বক্তব্য

বুধবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা শুরু হয় এবং দ্রুত তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। রাতভর ও পরদিন পর্যন্ত হামলা চলতে থাকে, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসে বৃহস্পতিবার বিকেলে। এক লিখিত বিবৃতিতে সরকার জানায়, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলার ঘটনা "অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত"। তবে একইসঙ্গে তারা দাবি করেছে, ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণেই জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

এই ব্যাখ্যা অনেক বিশ্লেষকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তারা মনে করছেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব হলো জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কোনোভাবেই প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডকে নীরবে প্রশ্রয় দেওয়া নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ইঙ্গিত করছে, হয় তারা নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতিকে অবনতি ঘটতে দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ প্রবণতা

এই হামলাগুলো কেবল সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনেরই প্রতিফলন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘদিনের একটি ধারা। তবে এবার যে মাত্রায় এবং যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র নীরব থেকেছে, তা গভীর উদ্বেগের বিষয়।

প্রশ্ন হলো, এই ঘটনাগুলো কি স্বতঃস্ফূর্ত নাকি পরিকল্পিত? যদি পরিকল্পিত হয়, তাহলে কারা এর পেছনে? সরকার কি ইচ্ছাকৃতভাবে এসব সহিংসতাকে নিয়ন্ত্রণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? নাকি এটি একটি অনিয়ন্ত্রিত প্রতিশোধমূলক বিস্ফোরণ?

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতির কীভাবে উন্নতি হয়, তা নির্ভর করবে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url