সৎ মানুষের বন্দিত্ব: প্রতিহিংসার শিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আজম খান?

 অনুসন্ধানী প্রতিবেদন  বিশেষ প্রতিনিধি সিলেট-

সিলেটের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির একজন মানুষ আজম খান কারাগারে। তিনি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন। দুর্নীতিমুক্ত ও সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত এই মানুষটিকে ‘অপারেশন ডেভিলহান্ট’-এর আওতায় আটক করা হয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, নেই স্বজনপ্রীতির কালিমা।

সৎ থেকে কি অপরাধ করলেন আজম খান?
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, আজম খান এমন একজন রাজনীতিবিদ, যিনি সবসময় মানুষের পাশে ছিলেন, কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। সিলেটের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে যদি ১০০ জনের কাছে তার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, তাহলে অন্তত ৯০ জনই তাকে ভালো মানুষ হিসেবে বর্ণনা করবেন।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, "আজম খান সাহেব রাজনীতি করেও কখনো নিজের লাভের জন্য কিছু করেননি। সবসময় গরিব-দুঃখীদের পাশে থেকেছেন। আজকে তাকে কারাগারে পাঠানো হলো—এটা খুব দুঃখজনক।"

একজন শিক্ষক বলেন, "আমরা রাজনীতিতে সৎ মানুষ চাই। কিন্তু এখন দেখছি, যারা ভালো মানুষ, তাদেরই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আজম খান যদি অপরাধী হন, তাহলে প্রকৃত অপরাধীরা কোথায়?"

সততার পুরস্কার থেকে প্রতিহিংসার শিকার!
২০০৭ সালে ১/১১-এর সময় সেনা-সমর্থিত সরকার যখন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছিল, তখন অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু আজম খান ছিলেন ব্যতিক্রম। তার সততার পুরস্কার হিসেবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অথচ আজ, প্রায় দুই দশক পর, সেই মানুষটিকেই কারাগারে পাঠানো হলো!

‘জুলাই আন্দোলনে কিছুই করেননি, তবু বন্দি!’
আজম খান কখনো সহিংস রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। এমনকি সাম্প্রতিক ‘জুলাই আন্দোলনের’ সময় তিনি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি, কোনো মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নেননি। তাহলে কেন তাকে বন্দি করা হলো?

যারা সত্যিকার অপরাধী, তারা কোথায়?

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রকৃত অপরাধীরা হয় ক্ষমতার আশ্রয়ে থেকে যাচ্ছে, নয়তো নিরাপদে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। কিন্তু যারা রাজনীতি সৎভাবে করেছেন, তারা প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন।

একজন রিকশাচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "এই দেশে ভালো মানুষ টিকে থাকতে পারে না। যারা টাকা খেয়ে সব শেষ করেছে, তারা ভালো আছে। আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের নেতা আজম খান আজ জেলে!"

একজন ভ্যানচালক বলেন, "আমাদের জন্য উনি অনেক কিছু করেছেন। বিনা পয়সায় অনেক মানুষকে সাহায্য করেছেন। আজকে উনিই যদি অপরাধী হন, তাহলে আমাদের মতো গরিবদের কে দেখবে?"

একজন সবজি বিক্রেতা বলেন, "উনি আমাদের বাজারে আসলে কখনো দামাদামি করতেন না। গরিব মানুষ দেখলে সাহায্য করতেন। এমন ভালো মানুষকে কারাগারে পাঠানো মানে ন্যায়বিচার নেই এই দেশে।"

জনগণের প্রশ্ন: আমরা কি এই পরিবর্তন চেয়েছিলাম?

একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বলেন, "আমরা আওয়ামী লীগের জন্য অনেক কিছু করেছি। কিন্তু এখন দেখি, যারা আওয়ামী লীগকে দুর্দিনে টিকিয়ে রেখেছিল, তারাই শাস্তি পাচ্ছে!"

সিলেটের জনগণ আজ একটাই প্রশ্ন তুলছে—এই গ্রেপ্তার কি আইনের শাসনের অংশ, নাকি প্রতিহিংসার রাজনীতি?

মুক্তি দাবি উঠছে সর্বস্তরে

আজম খানের মুক্তির দাবিতে ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার লোকজন আওয়াজ তুলতে শুরু করেছে।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, "এই অন্যায় আমরা মানতে পারি না। একজন ভালো মানুষকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা ঠিক না।"

একজন ছাত্রনেতা বলেন, "আমরা চাই, সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক এবং নিরপরাধ মানুষদের মুক্তি দিক।"

বাংলাদেশ কি এমন পরিবর্তনের জন্য লড়াই করেছিল? যেখানে অপরাধীরা নিরাপদে থাকবে, আর সৎ মানুষরা কারাগারে? জনগণ আজ জবাব চাইছে!



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url