আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংকট: ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ ও তৃণমূলের বঞ্চনা।


বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ শুধু একটি দল নয়, এটি একটি আদর্শ ও আন্দোলনের প্রতীক। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দলটির ভেতরে অনুপ্রবেশ, তদবির বাণিজ্য ও দুর্নীতির সংস্কৃতি বিস্তারের অভিযোগ উঠে আসছে, যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আওয়ামী লীগ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।
দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক অবক্ষয়ের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষ করে, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা পদ ও মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, বরং অনুপ্রবেশকারীদের হাতে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব চলে গেছে।

রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ও দুর্নীতির বিস্তার
গণভবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে মন্ত্রী, এমপি এবং শেখ পরিবারের কিছু সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ত্যাগ স্বীকার করলেও দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তাদের গুরুত্ব কমেছে, বরং প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদপুষ্ট কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি দলে স্থান পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পরিবর্তে তদবিরকারীদের প্রাধান্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এতে দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের কোণঠাসা হতে হয়েছে।

যুবলীগে ত্যাগী কর্মীদের উপেক্ষা
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাম্প্রতিক গঠনতন্ত্র ও কমিটি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকাশ, মাত্র একটি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদের জন্য ১৩০০ জন আবেদন করেছিল, যাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিনের ছাত্রলীগ নেতা। অথচ, চূড়ান্ত কমিটিতে উঠে এসেছে এমন কিছু নাম, যাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই বললেই চলে। বরং ব্যারিস্টার, ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, এমনকি অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্তদেরও দলে স্থান দেওয়া হয়েছে।এদিকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরীক্ষিত কর্মীরা দলের গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে বাদ পড়েছেন। তাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমের ফসল আজ অনুপ্রবেশকারীরা ভোগ করছে।

ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ যদি এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে দলটির অভ্যন্তরীণ ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। মাঠের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হলে, তারা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়ে পড়বে, যা দলকে জনবিচ্ছিন্ন করে তুলতে পারে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ বরাবরই গণমানুষের দল হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু আজ তৃণমূলের কর্মীরা মামলা-হামলা নিয়ে জেলে দিন কাটাচ্ছেন, আর শীর্ষ নেতারা দেশ-বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন—এমন অভিযোগ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।

আওয়ামী লীগের ভেতরের এই সংকট যদি সমাধান করা না হয়, তাহলে দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে। এখন সময় এসেছে আত্মসমালোচনার, ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের এবং দুর্নীতিমুক্ত সংগঠন গঠনের। নতুবা, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথ আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
লেখক-
আজিজুর রহমান 
প্যারিস ফ্রান্স।
পর্ব ১
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url