উপদেষ্টাদের "নিয়োগ বাণিজ্যে সুপারিশই নতুন রেসিপি: রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ!"


ঢাকা: বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ ব্যবস্থায় আবারও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যা সরাসরি দুর্নীতির উৎস হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। কোটা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থাকে বাতিল করে সুপারিশভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যা নিয়োগ পরীক্ষার স্বচ্ছতাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ১০০% সমন্বয়ক কোটায় চাকরি প্রদান নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিয়োগ ব্যবস্থাকে একটি দুর্নীতির চক্রে পরিণত করা হয়েছে। এর ফলে কেবল সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই নিয়োগ পাচ্ছেন, যা প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ ব্যবস্থাকে চিরতরে বিলুপ্ত করছে।

নিয়োগ সুপারিশ: ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির নতুন মডেল

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, সুপারিশের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের ছত্রছায়ায় এই সুবিধা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায় যেসব ব্যক্তি সরাসরি যুক্ত ছিলেন, তাদের ভূমিকা সন্দেহজনক এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সামিল।

নিচে কিছু সুপারিশের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের নাম দেওয়া হলো, যা স্পষ্টভাবে দুর্নীতির ইঙ্গিত বহন করে—

1. উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেম—সর্বাধিক সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তি।


2. উপদেষ্টা নাহিদ—ঢাকা ওয়াসার জোন ১০-এ সরাসরি সুপারিশ করেছেন।


3. কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নুসরাত—ঢাকা ওয়াসার জোন ১ ও জোন ৫-এ সুপারিশ করেছেন।


4. ঢাকা কলেজের সমন্বয়ক নাজমুল—জেনারেটর সার্ভিস ও কমন সার্ভিসে সুপারিশ করেছেন।


5. কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তৌহিদ—ঢাকা ওয়াসার জোন ৬, জোন ১০ ও ট্রান্সপোর্ট পুলে সুপারিশ করেছেন।



এই নামগুলোই প্রমাণ করে যে সুপারিশের মাধ্যমে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে চাকরি দিয়ে দুর্নীতির নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে।

দুর্নীতির ধাপসমূহ: কীভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অবৈধ?

১. নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হয়েছে: সাধারণ প্রার্থীদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সুপারিশের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
2. মেধার মূল্যায়ন নেই: নিয়োগ পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার বা অন্য কোনো প্রতিযোগিতামূলক মূল্যায়ন ছাড়াই প্রার্থীদের সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
3. ক্ষমতার অপব্যবহার: উপদেষ্টারা তাদের নিজস্ব পরিচিত ব্যক্তিদের সুপারিশ করে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন, যা অনৈতিক ও বেআইনি।
4. দুর্নীতির নতুন মডেল: চাকরি পেতে এখন আর যোগ্যতার দরকার নেই—শুধু একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তির সুপারিশই যথেষ্ট!

সুপারিশ মানেই দুর্নীতি: স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের ইঙ্গিত

এই নিয়োগ ব্যবস্থা দেখিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশে দুর্নীতি এখন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অংশ হয়ে গেছে। যে কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতার সুযোগ না থাকলে, তা সরাসরি স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির শামিল।

বিশ্লেষকদের মতে, নতুন নিয়োগ ব্যবস্থা প্রমাণ করে যে উপদেষ্টারা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। যখন কেউ সুপারিশ ছাড়া চাকরি পেতে পারে না, তখন এটি ঘুষ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মেধাবীদের বঞ্চিত করার একটি কৌশল ছাড়া কিছুই নয়।

বৈষম্যহীন সমাজ, নাকি দুর্নীতিবাজদের স্বর্গরাজ্য?

সুপারিশভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থাকে "বৈষম্যহীন সমাজ" গঠনের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, বাস্তবতা হলো এটি একটি দুর্নীতিপ্রবণ নিয়োগ প্রক্রিয়া যেখানে সাধারণ নাগরিকদের কোনো সুযোগ নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আরও দুর্নীতিগ্রস্ত করবে। যদি এই ব্যবস্থা বহাল থাকে, তবে ভবিষ্যতে মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিরা দেশ থেকে বিতাড়িত হবে, এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবে।

বাংলাদেশের নাগরিকরা এই নতুন নিয়োগ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া ও দুর্নীতি বন্ধের দাবি তুলতে পারেন, যাতে ভবিষ্যতে মেধা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।

Euro Bangla Khobor-এর জন্য প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন সুমাইয়া মেহরুজ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url