শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ব্যর্থতা, নতুন উপদেষ্টাকে ঘিরে জনমনে সংশয়।


নিজস্ব প্রতিবেদক, ইউরো বাংলা খবর

বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন। তার সময়কালে শিক্ষানীতি ও প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জটিলতা এবং সিদ্ধান্তহীনতা তৈরি হওয়ার ফলে সরকারের ওপর চাপ তৈরি হয়। শিক্ষা খাতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগের মধ্যেই তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন।
তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং মানবাধিকারকর্মী সি আর আবরার। তবে, তার নিয়োগ নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, তিনি শিক্ষা খাতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে পারবেন না, বরং তার অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ব্যর্থতার কারণ কী?

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে শিক্ষাখাতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা ছিল। তবে, তিনি এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তার ব্যর্থতার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে—

১. শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা – নতুন কারিকুলামের কার্যকর বাস্তবায়ন নিয়ে তার দফতর বিভিন্ন সময় দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল।
২. বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলে দুর্নীতি রোধে ব্যর্থতা – বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তিনি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
৩. শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ – সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নিয়ে শিক্ষক সমাজে অসন্তোষ দেখা দেয়।
৪. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়নে উদ্যোগের অভাব – গ্রামীণ ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর কোনো নতুন নীতি তিনি গ্রহণ করতে পারেননি।

এমন পরিস্থিতিতে তিনি পদত্যাগ করেন, যা অনেকেই তার ব্যর্থতার আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তি হিসেবেই দেখছেন।

নতুন উপদেষ্টা সি আর আবরার: সংশয় কেন?

সি আর আবরার একজন সুপরিচিত শিক্ষাবিদ এবং মানবাধিকারকর্মী। তবে, তার অতীত কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে তার নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া কেন?

১. মানবাধিকারকর্মী হিসেবে বিতর্কিত ভূমিকা:

মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করলেও তার কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তিনি কতটা নিরপেক্ষ থাকবেন, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে।


2. একাডেমিক প্রশাসনে অভিজ্ঞতার অভাব:

তিনি দীর্ঘদিন ধরে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কোনো দায়িত্ব পালন করেননি। ফলে, তার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।



3. শিক্ষাখাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতির ঘাটতি:

শিক্ষা ব্যবস্থায় যে কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার, তা বাস্তবায়ন করতে গেলে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। অনেকে মনে করছেন, তিনি এসব চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে পারবেন না।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একাংশ মনে করছে, শিক্ষা খাতে নতুন নেতৃত্ব পরিবর্তন আনতে পারে, তবে অনেকেই শঙ্কিত যে, সি আর আবরারের নিয়োগ শিক্ষাখাতে নতুন সংকট তৈরি করতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, "তিনি কি আদৌ শিক্ষাখাতে সংস্কার আনতে পারবেন, নাকি রাজনৈতিক ও মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকবেন?"
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নতুন উপদেষ্টার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আহমেদ বলেন, "ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ব্যর্থতার পর শিক্ষাখাত অনেক পিছিয়ে পড়েছে। নতুন উপদেষ্টাকে যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়, তবে পরিবর্তন আসতে পারে। তবে, রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে তার জন্য কাজ করা কঠিন হবে।"

নতুন উপদেষ্টার সামনে চ্যালেঞ্জ

১. কারিকুলাম সংস্কার: শিক্ষানীতির আধুনিকায়ন এবং বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. শিক্ষার মানোন্নয়ন: শহর ও গ্রামের শিক্ষার বৈষম্য কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. দুর্নীতি দমন: বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর প্রশাসনিক দুর্নীতি বন্ধ করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
৪. রাজনৈতিক চাপ সামলানো: নীতি প্রণয়নে রাজনৈতিক প্রভাব এড়ানো তার জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ হতে পারে।

শিক্ষা উপদেষ্টার পরিবর্তন এক নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করতে পারে, তবে জনমনে যেসব প্রশ্ন ও সংশয় তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে হলে নতুন উপদেষ্টাকে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা এবং কার্যকর নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি শিক্ষা খাতের উন্নয়নে সত্যিই অবদান রাখতে পারবেন। না হলে, তার পূর্বসূরির মতো তাকেও ব্যর্থতার তকমা নিয়ে সরে যেতে হতে পারে।

ইউরো বাংলা খবর | আমরা নিরপেক্ষ নই, আমরা স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলি


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url