বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী ষড়যন্ত্র ভয়াবহ পরিকল্পনা।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৌলবাদী শক্তিগুলো নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর গোপন সমর্থন, সীমান্তবর্তী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সহায়তা এবং রাষ্ট্রের প্রশাসনিক দুর্বলতা।
নতুন তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (AA) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে প্রথমে একটি ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যা পরবর্তীতে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এই পরিকল্পনায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ISI সরাসরি জড়িত, আর মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে।
আরাকান আর্মি ও বাংলাদেশ: গোপন ষড়যন্ত্রের উন্মোচন
আরাকান আর্মি (AA) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সক্রিয় একটি শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যারা জান্তা সরকারবিরোধী লড়াই চালিয়ে আসছে। তবে সাম্প্রতিক তথ্যে উঠে এসেছে, তারা শুধুমাত্র মিয়ানমারেই নয়, বরং বাংলাদেশের ভেতরেও নিজেদের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে।
বাংলাদেশে আরাকান আর্মির নতুন লক্ষ্য:
- পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম দখল করা – এই অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে একটি স্বাধীন ‘ইসলামী অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করা।
- বাংলাদেশে ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি করা – এই অঞ্চলে শরিয়াভিত্তিক শাসন চালু করা এবং পরবর্তীতে পুরো বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।
- উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর সমর্থন নিশ্চিত করা – নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবি, আনসার আল ইসলাম, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (HuJI), এবং হেফাজতে ইসলাম-এর মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে একত্রিত হয়ে নতুন সন্ত্রাসী জোট তৈরি করা।
- বিদেশি অর্থায়ন ও অস্ত্র সংগ্রহ – পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে সরাসরি সহায়তা নেওয়া।
আরাকান আর্মির সহযোগী: ফোর ব্রাদার জঙ্গি জোট
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মিয়ানমারের চারটি রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন, যারা মিলে "ফোর ব্রাদার" নামে পরিচিত:
- আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (ARSO)
- আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামী ফ্রন্ট (ARIF)
- আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ARNO)
- আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (ARSA)
তাদের ভূমিকা:
- বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা।
- অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুদ ও পাচারের নতুন রুট তৈরি করা।
- বাংলাদেশে উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে একটি বিশাল ইসলামী জঙ্গি জোট তৈরি করা।
IRA: বাংলাদেশে নতুন জঙ্গি বাহিনী
নতুন করে বাংলাদেশে “ইসলামী রেভোলিউশনারি আর্মি (IRA)” নামে একটি উগ্রবাদী সংগঠন আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। তারা আরাকান আর্মির সরাসরি সহায়তায় বাংলাদেশে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালাবে।
IRA-এর পরিকল্পনা:
- বাংলাদেশে সশস্ত্র ইসলামী বিপ্লব ঘটানো।
- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে প্রথম দখল করা, তারপর সারা দেশে জিহাদ পরিচালনা করা।
- ভারতবিরোধী জঙ্গি কার্যক্রম চালানো – যাতে আন্তর্জাতিকভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করা যায়।
- সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা করা – তাদের বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করা।
- সীমান্ত এলাকাগুলোকে বাফার জোন বানিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ চালানো।
IRA-এর প্রশিক্ষণ ও অর্থায়ন:
- প্রথম ধাপে: আরাকান আর্মি ও কুকিচীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (KNF) তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেবে।
- দ্বিতীয় ধাপে: পাকিস্তানের ISI অস্ত্র ও অর্থায়ন দেবে।
- তৃতীয় ধাপে: মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতা ও বিপদের আশঙ্কা
সরকারের কৌশলগত দুর্বলতা ও নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
সরকারের বড় ভুলগুলো:
- নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান না চালানো।
- সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা দুর্বল রাখা।
- রাজনৈতিক স্বার্থে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আপস করা।
- জঙ্গি অর্থায়নের উৎস বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া।
সরকার এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে আগামী ১-২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে একটি বৃহৎ সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল গঠিত হবে।
- সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে যাবে।
- বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের সরাসরি সংঘর্ষ হবে।
- আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর নজর বাংলাদেশে পড়বে, ফলে দেশে সিরিয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
- আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো – তাদের বাংলাদেশি মদদদাতাদের শনাক্ত করা।
- IRA-এর সংগঠন গঠনের চেষ্টা ধ্বংস করা – তাদের নেতাদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনা।
- সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা – বিশেষত চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজার অঞ্চলে সেনা মোতায়েন বাড়ানো।
- পাকিস্তানের ISI-এর ষড়যন্ত্র উন্মোচন করা – আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে তাদের অর্থায়ন বন্ধ করা।
- রাজনৈতিক দলগুলোর মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে আপস করা বন্ধ করা।
বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ সংকটের দ্বারপ্রান্তে। যদি সরকার এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বাংলাদেশ দ্রুত একটি মৌলবাদী ও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।পরবর্তী দুই বছরে যদি বাংলাদেশ কার্যকর জঙ্গি দমন অভিযান না চালায়, তাহলে দেশটি আফগানিস্তান বা সিরিয়ার মতো জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী: Euro Bangla Khobor
"We are not neutral—we speak for freedom."